নক্ষত্রেরও পতন হয়। এটাই জগতের নিয়ম। সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। তবে যেভাবে হঠাৎ করেই আজ টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিলেন তাতে একটু অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক!
কানপুর টেস্টের প্রেসবক্সে নাজমুল হোসেন শান্তর জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু টেস্ট পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশি অধিনায়কের পরিবর্তে সাকিব এসে একটা চমকই দিলেন। তবে সংবাদ সম্মেলন শুরুর পর যা বললেন তাতে হতবাকই হতে হলো সাংবাদিকদের। হঠাৎ করেই যে তিনি ক্রিকেটের দুই সংস্করণ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলেন। সাকিব জানান, সবশেষ বিশ^কাপের শেষ ম্যাচটিই তার ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি। আর অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে অবসর নেব।
সাকিবের এমন ঘোষণা শোনার পর সংবাদ সম্মেলন কক্ষের পরিবেশই বদলে গেল। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট কেন্দ্রিক প্রশ্নের বিপরীতে তার অবসর নেওয়ার ঘোষণা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন চলতে থাকল। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি উত্তর দিয়ে যাচ্ছেন। কখনো আবেগে চোখের কোণে জমা হওয়া জল মুছছেন আবার কখনো কখনো উত্তর দিতে গিয়ে হাসছেন।
অবসর নেওয়ার প্রসঙ্গে সাকিব বলেছেন, ‘আমার মনে হয় টি-টোয়েন্টিতে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি। মিরপুর টেস্টে খেলতে পারলে সেটি হবে আমার শেষ টেস্ট।’ তবে মিরপুরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। সেই শঙ্কার বিষয়টি নিজেও স্বীকার করেছেন সাকিব।
আগামী ২১ অক্টোবর মিরপুরে শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজ নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি তো এভেইলএবল। দেশে যা পরিস্থিতি আসলে সব তো আমার উপর না। এগুলা নিয়ে বিসিবির সাথে আলোচনা হয়েছে আমার কী প্ল্যান বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে। এই টেস্ট এবং হোম সিরিজ।আমি ফিল করেছিলাম যে আমার শেষ সিরিজ হবে হোমে গিয়ে যদি খেলতে পারি সেভাবেই কথা হয়েছিল ফারুক ভাই এবং নির্বাচকদের সাথে। মিরপুর টেস্ট হবে আমার শেষ টেস্ট। বোর্ডের সবার সাথে কথা হয়েছে।’
তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা থাকায় সাকিব বাংলাদেশে আসলে গ্রেপ্তার হওয়ার একটা শঙ্কা রয়েছে। সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে। সে সব নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘তারাও এটা চেষ্টা করছে কীভাবে আমি গিয়ে খেলতেও পারি নিরাপদ ফিল করি এবং একইসাথে দেশের বাইরে বের হতে দরকার হলে দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। এই জিনিসটা বোর্ড খেয়াল করছে এবং বিষয়গুলার সাথে রিলেটেড মানুষ আছে যারা এগুলো দেখছে।তারা হয়ত এসব নিয়ে আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দিবে যে আমি হয়ত দেশে গিয়ে খেলে এটলিস্ট টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’
২০০৬ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেকের পর থেকেই অবিচ্ছেদ অংশ হন সাকিব। ৩৭ বছর বয়সী অলরাউন্ডারকে ছাড়া যেন বাংলাদেশকে কল্পনাই করা যায় না। দীর্ঘ ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ৭০ টেস্টে ৪৬০০ রান করেছেন তিনি। ৫ সেঞ্চুরির বিপরীতে ৩১ ফিফটি। আর বাঁহাতি স্পিনে উইকেট শিকার করেছেন ২৪২টি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলে রান ও উভয়ের সংখ্যা উভয়ই বাড়বে। এ ছাড়া ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টেও নামের পাশে আরোও কিছু রান-উইকেট বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
অন্যদিকে ১২৯ টি-টোয়েন্টিতে ২৫৫১ রান করেছেন সাকিব। ফিফটি আছে ১৩ টি। আর ১৪৯ উইকেট রয়েছে তার ক্যারিয়ারে। দুই সংস্করণ থেকে বিদায় নিলো ওয়ানডেতে তাকে পাওয়া যাবে আগামী চ্যাম্পিয়নস ট্রফি পর্যন্ত। পাকিস্তানে হতে যাওয়া ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইচ্ছা প্রকাশ করেছন সংবাদ সম্মেলনে। ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার নিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘আশা করছি আরও ৯টি ওয়ানডে।’