ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- ‘ওয়ান থিং লিডস টু অ্যানাদার’। অর্থাৎ, একটি আরেকটির পথপ্রদর্শক। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজ জয়কেও তেমনটাই বলা যেতে পারে। পাকিস্তানের মাঠে তাদের বিপক্ষে কখনো কোনো সংস্করণে ম্যাচ জয়ের সুযোগ না পাওয়া বাংলাদেশ যে এবার সিরিজ জিতেছে।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট জয়ই এই সুযোগ এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়টি সিরিজ জয়ের গোড়াপত্তন করেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে শুধু টেস্ট জিতেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করেছে ২-০ ব্যবধানে জিতে। দ্বিতীয় দল হিসেবে পাকিস্তানকে এমন বিব্রতকর রেকর্ড উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আগে একমাত্র দল হিসেবে এই কীর্তির মালিক ছিল ইংল্যান্ড। ২০২২ সালে তিন টেস্টের সিরিজে পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে প্রথমবার ধবলধোলাই করেছিল ইংল্যান্ড। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় কোনো প্রতিপক্ষকে টেস্টে ধবলধোলাই করল। এর আগে কীর্তি গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করার লক্ষ্যে দ্বিতীয় টেস্টে ১৮৫ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। এই রান তাড়া করতে নেমে দুর্দান্ত শুরু পায় সফরকারীরা। গতকাল বৃষ্টিতে তৃতীয় সেশন ভেস্তে যাওয়ার আগে বিনা উইকেটে ৪২ রান করেছিল বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম দিনের শুরুটা দেখেশুনে করলেও বেশিক্ষণ পিচে টিকতে পারেননি দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। ১২ রানের ব্যবধানে দুজনই বিদায় নেন। অথচ, আউট হওয়ার আগে দুজনই জীবন পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি।
দলীয় ৫৮ রানে ব্যক্তিগত ৪০ রানে বিদায় নেন জাকির। বাংলাদেশি ওপেনারের দেখানো পথে দ্রুত ফেরেন সাদমানও। ব্যক্তিগত ২৪ রানে ফেরেন তিনি। ৭০ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে পথ দেখান নাজমুল হোসেন শান্ত ও মমিনুল হক। তৃতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে। তবে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক। প্রথম সেশন শেষে ব্যাটিংয়ে নেমেই দ্রুত ফেরেন তিনি। দলের জয় যখন ৫৮ রান দূরে ঠিক তখনই ব্যক্তিগত ৩৮ রান করে সালমান আগার করা অনেক বাইরের বল ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন তিনি। জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেননি মুমিনুল। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে অযথা বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন তিনি।
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের বাকি কাজটুকু সারেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দলক ৬ উইকেটে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তারা। সাকিবের ১৭ রানের বিপরীতে ২২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।
অথচ, বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস যেভাবে শুরু হয়েছিল তাতে কেউ হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি এই টেস্ট জিতবেন শান্ত-মুশফিকরা। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসের ২৭৪ রানের বিপরীতে যে ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ৭ম উইকেটের জুটিতে ১৬৫ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান লিটন দাস (১৩৮) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (৭৮)। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে অলআউট করে জয়ের পথটা তৈরি করে দেন টেস্টে প্রথমবার ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়া বাংলাদেশি পেসাররা।