Press ESC to close

তামিম ইকবালের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর: গৌরবময় এক অধ্যায়ের সমাপ্তি

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা তারকাদের মধ্যে অন্যতম তামিম ইকবাল। দীর্ঘ ১৬ বছরের অসাধারণ ক্যারিয়ারের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এই ব্যাটিং জাদুকর। তার ব্যাটের ঝলকে জ্বলজ্বল করেছে দেশের ক্রিকেট। তামিম ইকবাল কেবল একজন ক্রিকেটার নন; তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের একটি যুগ।

অবসরের ঘোষণা ও কারণ:
তামিম জানান, “অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম। সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্ট, আমি চাই না আমার কারণে দলের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটুক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অধ্যায় শেষ।”

তিনি আরও বলেন, “এক বছরেরও বেশি সময় আগে নিজেই বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু এরপরও অযথা আলোচনা হয়েছে। অবসর নেওয়া একজন পেশাদার ক্রীড়াবিদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত, এবং আমি মনের কথায় সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও নির্বাচকদের আন্তরিক আহ্বান সত্ত্বেও নিজের অবস্থানে অটল ছিলেন তামিম। তিনি বলেন, “তারা আমাকে ফেরার জন্য চেয়েছেন, যা আমার জন্য সম্মানের। তবে আমি নিজের অনুভূতির প্রতি সৎ থাকতে চেয়েছি।”

গৌরবময় ক্যারিয়ার:

পরিসংখ্যান ও অর্জন
তামিম ইকবালের ক্যারিয়ার বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। তার পরিসংখ্যান এবং অর্জন তার শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য দেয়।

টেস্ট ক্রিকেটে:
ম্যাচ: ৭০
রান: ৫,১৩৪
সেঞ্চুরি: ১০
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ২০১৯)
প্রথম ইনিংসেই শতক হাঁকানোর রেকর্ড (২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে)
ওয়ানডে ক্রিকেটে:
ম্যাচ: ২৪১
রান: ৮,১৩১ (বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক)
সেঞ্চুরি: ১৪ (বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ)
ফিফটি: ৫৬
২০১২ সালে এশিয়া কাপে টানা চার ম্যাচে চারটি ফিফটি করার দুর্লভ কীর্তি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে:
ম্যাচ: ৭৮
রান: ১,৭৫৮
সেঞ্চুরি: ১ (বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি, ওমানের বিপক্ষে ২০১৬)
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৪৭ গড়ে সর্বাধিক ২৯৫ রান করেছিলেন।
মাইলফলক ইনিংস ও স্মরণীয় মুহূর্ত:
তামিমের ব্যাটিং শুধু পরিসংখ্যান নয়, স্মৃতিতেও জায়গা করে নিয়েছে।

২০০৭ বিশ্বকাপ: ভারতের বিপক্ষে ৫১ রানের ঝোড়ো ইনিংস, যা বাংলাদেশের জয়কে ঐতিহাসিক করে তোলে।
লর্ডসে সেঞ্চুরি: ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি করে “লর্ডস অনার্স বোর্ডে” নাম লেখানো।
২০১২ এশিয়া কাপ: পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচে ফিফটি।
২০১৫ বিশ্বকাপে: স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ বলে ৯৫ রানের অসাধারণ ইনিংস।
অধিনায়ক হিসেবে তামিমের প্রভাব
তামিম ইকবাল শুধু ব্যাটসম্যানই নন, একজন সফল অধিনায়কও ছিলেন।

তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল ২০২১-২২ মৌসুমে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে।
২০২১ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ প্রথমবার আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগ সিরিজ জিতেছিল।

বিশেষ কৃতিত্ব সমূহ:
বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫,০০০ রান।
একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে তিন ফরম্যাটেই দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় জায়গা।
বাংলাদেশের একমাত্র ওপেনার, যিনি তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪টি সেঞ্চুরি করে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক।
২০১৯ সালে “আইসিসি ওয়ার্ল্ড একাদশে” জায়গা পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি।
ভক্তদের ভালোবাসা ও পরিবারের আবেগ
তামিম বলেন, “যেখানেই গিয়েছি, ভক্তরা আমাকে জাতীয় দলে দেখতে চেয়েছেন। আমার ছেলে পর্যন্ত তার মাকে বলেছে, বাবাকে দেশের জার্সিতে খেলতে দেখতে চায়। তবে আমি তাকে বলেছি, ‘তুমি যেদিন বড় হবে, বাবার সিদ্ধান্ত বুঝতে পারবে।’”

বাংলাদেশ ক্রিকেটে তামিমের প্রভাব:
তামিম ইকবাল ছিলেন সেই ক্রিকেটার, যিনি একাই বদলে দিয়েছেন ওপেনিং ব্যাটিংয়ের মানদণ্ড। তার সাহসী ব্যাটিং, দায়িত্বশীল নেতৃত্ব, এবং ক্রিকেটের প্রতি অঙ্গীকার তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।

তামিমের অবসরে বাংলাদেশের ক্রিকেট একটি স্বর্ণযুগের সমাপ্তি দেখল। কিন্তু তার স্মৃতি এবং অবদান চিরকাল ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে জীবিত থাকবে। মাঠে হয়তো তাকে আর দেখা যাবে না, তবে তার অর্জন গৌরবের আলোয় সবসময় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

তামিম ইকবালের নতুন জীবনের জন্য রইল অশেষ শুভকামনা।

ফেসবুকে খেলার কলামের সাম্প্রতিক আপডেট

This message is only visible to admins.
Problem displaying Facebook posts. Backup cache in use.
Click to show error
Error: The user must be an administrator, editor, or moderator of the page in order to impersonate it. If the page business requires Two Factor Authentication, the user also needs to enable Two Factor Authentication. Type: OAuthException