‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’ কালিপ্রসন্ন ঘোষের ‘পারিব না’ কবিতার এই ছত্রকে প্রমাণ করতে চেয়েছিল নেপাল। কিন্তু এবার হতাশ হলো তারা। আগামীতে আবার চেষ্টা করতে হবে এমন আক্ষেপ নিয়েই বাকরুদ্ধ থাকতে হলো।
বাংলাদেশের কাছে হেরে যে এবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না নেপালের। এবার নিয়ে সব মিলিয়ে ৬ বার ফাইনালে উঠে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা হলো না তাদের। আজ ঘরের মাঠে তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে এটা দেখতেই দশরথ স্টেডিয়ামে ১৫ হাজারের বেশি দর্শক হাজির হয়েছিলেন। ম্যাচের শুরু থেকে সমুদ্রের গর্জনের মতো ‘নেপাল নেপাল’ চিৎকার করে খেলোয়াড়দের উদ্বুদ্ধ করছিলেন দর্শক-সমর্থকরা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে দেননি দুই চাকমা মনিকা ও ঋতুপর্ণা।
দুজনের গোলেই যে পুরো স্টেডিয়ামে ম্যাচ শেষে পিনপনতা নীরবতা নেমে আসে। সর্বশেষ বারের মতো এবারো বাংলাদেশের কাছে হেরে ঘরে ফিরতে হয় হতাশ হয়ে সমর্থকদের। ২০২২ সালের আসরে ৩-১ ব্যবধানে হারা নেপাল আজ হেরেছে ২-১ গোলে। নেপালের হয়ে ব্যবধান কমানো গোলটি করেছেন আমিশা কার্কি।
দশরথ স্টেডিয়ামে শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল নেপাল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের কাছে বলা যায় খাবি খেয়েছে তারা। সাফে আরেকবার ইতিহাস লেখার আগে ম্যাচে দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের ভুলে সুযোগটা কাজেও লাগিয়েছিলেন তহুরা খাতুন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় গোলবার। তার নেওয়া শট বারে লেগে ফিরে আসে।
একইভাবে হতাশ হয় নেপালও। ১০ মিনিটে নেওয়া নেপালের ফরোয়ার্ড আমিশার শটও বারে লেগে ফিরে আসে। দুই অর্ধে দুই বারে বল লাগায় কোনো দলই আর লিড নিয়ে বিরতিতে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। তবে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর ৭ মিনিট পরেই ম্যাচে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৫২ মিনিটে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের বাড়ানো বল প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে না পারলে বাংলাদেশ লিড এনে দেন মনিকা। গোলরক্ষক অঞ্জিলা সুব্বাকে ডান প্রান্ত দিয়ে পরাস্ত করেন এই মিডফিল্ডার।
তবে ১৫ হাজারের বেশি জন সমুদ্রকে বেশিক্ষণ স্তব্ধ করে রাখতে পারেননি মনিকা-সাবিনারা। ৫৬ মিনিটেই যে সমতায় ফেরে নেপাল। সতীর্থের রক্ষণচেরা এক পাসে গোল করতে ভুল করেননি আমিশা। তবে চেনা মঞ্চে হাল ছাড়ার পাত্র নন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। ৬৮ মিনিটে তেমনি এক সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। বলা যায় শুধু উদযাপন করাই বাকি ছিল মারিয়া মান্দার। কিন্তু তাঁকে হতাশ করেন গোলরক্ষক অঞ্জিলা। বক্সের বাইরে থেকে মারিয়ার চোখ ধাঁধানো শট যখন জালের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে যাচ্ছিল ঠিক তখনই শুন্য লাফ দিয়ে অবিশ্বাস্য এক সেভ করলেন নেপালের গোলরক্ষক।
মারিয়াকে হতাশ করতে পারলেও ৮১ মিনিটে নেপালকে বাঁচাতে পারেননি অঞ্জিলা। আসলে ঋতুপর্ণার নেওয়া অবিশ্বাস্য শটটি থামানোর কোনো উপায়ই ছিল না তাঁর। তবুও শূন্যে লাফ দিয়ে একটু চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তবে বাঁ প্রান্তের প্রায় টাচ লাইন থেকে ঋতুর অসাধারণ শট অঞ্জিলার আঙুল স্পর্শ করলেও জালে জড়াতে বাধ্য হয়েছে। শটটা যে এমনি মাপা ছিল ঋতুর। পরে নেপাল চেষ্টা করেও আর শোধ দিতে পারেনি। এতে রেফারি শেষ বাঁশি বাজালেই উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ দল। অন্যদিকে তখন হতাশার সাগরে যেন নিমজ্জিত পুরো নেপাল দলসহ ঘরের সমর্থকেরা। বাড়ি ফেরার সময় হয়তো অনেকেই মনে মনে বলেছেন এবারও স্বপ্ন পূরণ হলো না। পরের বারের জন্য আবার অপেক্ষা!