সব হতাশা যেন জমিয়ে রেখেছিল বার্সেলোনা। এক সঙ্গে করে তা ফিরিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল তারা। আজ মৌসুমের প্রথম ‘এল ক্ল্যাসিকোয়’ সেই সুযোগ পেয়ে সবগুলোর যেন প্রতিশোধ নিল তারা। রিয়াল মাদ্রিদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করেছে বার্সেলোনা।
রিয়ালকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষকে বড় ব্যবধানে হারানোটা যেন এ মৌসুমের অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তাদের। চ্যাম্পিয়নস লিগের সবশেষ ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে যেমন ৪-১ ব্যাবধানে বিধ্বস্ত করেছিল তারা। তারও আগে এবারের মৌসুমে কমপক্ষে প্রতিপক্ষের জালে ৪ গোল দিয়ে জয় পেয়েছে এ রকম ৬টি ম্যাচে। গত মৌসুমের মুখোমুখি ৪ এল ক্ল্যাসিকোর প্রতিটিতেই হেরেছিল কাতালান ক্লাব। এবার নতুন কোচ হ্যান্সি ফ্লিক দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দেখায় বার্সাকে জয় এনে দিলেন।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অবশ্য দারুণ শুরু করেছিল রিয়ালই। ১২ মিনিটে যেমন দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন্র কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে গোলবার ফাঁকা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি তিনি। শটটা অবশ্য দ্রুততার সঙ্গে নিয়েছিলেন প্রায় মাঝমাঠ থেকে। ফিরতি মিনিটে বার্সেলোনাও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। তবে রবার্ট লেভানডফস্কির কাছ থেকে পাওয়া পাসে যে চিপটা করলেন লামিনে ইয়ামাল তা সরাসরি রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক আন্দ্রে লুনিনের হাতে চলে যায়। অন্যদিকে ২২ মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র যে সুযোগটা মিস করলেন তা নিশ্চয়ই অনেকদিন পোড়াবে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। অঁরিলিঁয়ে চুয়ামেনির পাস পেয়ে ট্রেডমার্ক দৌড়ে বার্সেলোনার দুই খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলে বক্সের মধ্যে ঢুকে জোরালো শটটা যে নিলেন ডানবারের বাইরে। অথচ, তাঁর সামনে শুধুই বার্সেলোনার গোলরক্ষক ইনাকি পিনা ছিল দাঁড়িয়ে।
এমবাপ্পে-ভিনিসিয়ুসদের সুযোগ মিসের ভিড়ে রিয়ালকে রক্ষা করেন লুনিন। ২৮ মিনিটে দারুণ এক সেভ করে। প্রায় ২৭ গজ দূর থেকে পেদ্রির নেওয়া শটটি বিশ্বস্ত হাতে প্রতিহত করেন রিয়াল গোলরক্ষক। দুই মিনিট পরেই বার্নাব্যুর দর্শকদের আনন্দে ভাসিয়েছিলেন এমবাপ্পে। ৩০ মিনিটে গোল করে। তবে ভিএআরে তাঁর গোলের আনন্দ মাটি হয়ে যায়। লুকাস ভাসকেজের পাস ধরার আগে অফসাইড ছিলেন ফরাসি তারকা। এতে করে এল ক্ল্যাসিকোর অভিষেক ম্যাচে প্রথম গোল পাওয়া হয় না তাঁর। বার্সার হাই লাইন ডিফেন্সের ফাঁদে প্রথমার্ধেই ৮ বার অফসাইড হয়েছে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। যার ৭টিতেই এমবাপ্পের নাম জড়িয়ে। পরে কেউ কারো রক্ষণভাগ ভাঙতে না পারলে গোলশূন্য বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর উল্লাসে মাতে বার্সেলোনা। ৫৪ মিনিটে মার্ক কাসাদোর রক্ষণচেরা পাস ধরে গোলরক্ষক লুনিনকে একা পেয়ে ডানবার দিয়ে মাটি কামড়ানো শটে বল জালে জড়ান পোলিশ স্ট্রাইকার লেভানডফস্কি। সেই রেশ শেষ হতে না হতেই আরেকবার আনন্দে ভাসেন এবং বার্সাকে ভাসান লেভা। ৫৬ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত এক ক্রস করেন আলেহান্দ্রো বালদে। আনমার্ক লেভার দুর্দান্ত হেড লাফ দিয়েও ঠেকাতে পারেননি রিয়াল গোলরক্ষক। সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত লিগে ১৪ গোল করলেন লেভা।
পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে রিয়াল। ৬১ মিনিটে এমবাপ্পে গোলমুখে শটও নেন। তবে শটটি কম জোরালো হওয়ায় তালুবন্দি করতে সমস্যা হয়নি ইনাকি পিনার। পরে ৬৪ মিনিটে এল ক্ল্যাসিকোয় প্রথম গোল করার দারুন এক সুযোগ পেয়েছিলেন এমবাপ্পে। কিন্তু ভিনির পাসে বার্সা গোলরক্ষককে একা পেয়েও পরাস্ত করতে পারেননি ২৫ বছর বয়সী তারকা। তার শট সামনে এসে পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন পিনা। পরের মিনিটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও অফসাইডের কারণে আবারও হতাশ হন এমবাপ্পে।
অন্যদিকে হ্যাটট্রিকের সহজ সুযোগ মিস করেছেন লেভা। ৬৭ মিনিটে মুখে তুলে দেওয়ার মতো পাস দিয়েছিলেন রাফিনিয়া। গোলবার পুরো ফাঁকা পেয়ে ডান পোস্টে মারেন সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার। পরেক্ষনেই আরেকটি সুযোগ পান তিনি। তবে এবার বক্সের মধ্যে থেকে বারের উপর দিয়ে শট নেন। অপরদিকে এমবাপ্পেও সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। ৭১ মিনিটে তাঁর নেওয়া জোরালো শট পা দিয়ে প্রতিহত করেন পিনা।
এমবাপ্পে এল ক্ল্যাসিকোর প্রথম গোল পেতে ব্যর্থ হলেও বার্সার হয়ে পান ইয়ামাল। ৭৭ মিনিটে রাফিনিয়ার কাছ থেকে পাস পেয়ে ডান পায়ের জোরালো এক শটে এল ক্ল্যাসিকোর অভিষেক গোল করেন ১৭ বছর বয়সী লামিনে। এতে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া রিয়ালের কার্যত ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। পরে ম্যাচে ফেরা তো দূরে থাক চতুর্থ গোল হজম করে তারা। ৮৪ মিনিটে ইনিগো মার্তিনেজের লম্বা পাস ধরে গোলরক্ষক লুনিনের মাথার উপর দিয়ে বলকে পথ দেখিয়ে দেন রাফিনিয়া। সঙ্গে রিয়ালকে যেন ড্রেসিংরুমের পথও দেখিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। পরে আর কোনো গোল না হলে বছরের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোয় বার্নাব্যু থেকে ৪-০ ব্যবধানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।