চোখ কচলানো এক ফল ছিল! আজ থেকে ৪ বছর আগে এমনই এক হার দেখেছিল বার্সেলোনা। নিজেদের সমশক্তির বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮-২ গোলে হেরেছিলেন লিওনেল মেসি-লুইস সুয়ারেজরা। এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই দল যতবারই মুখোমুখি হয়েছে অবধারিতভাবেই সেই ম্যাচ সামনে এসেছে।
আজকেও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এবারে গল্পটা ভিন্ন। সেদিনের বায়ার্ন কোচ হ্যান্সি ফ্লিক এবার বার্সার ডাগআউটে। সঙ্গে জার্মান ক্লাবের সেই গোল মেশিন রবার্ট লেভানডফস্কিও আজ প্রতিপক্ষ। দুইয়ের সমন্বয়ে ফল বার্সার পক্ষেই। তবে বার্সার জয়ের মূল নায়ক হ্যাটট্রিক ম্যান রাফিনিয়া। সেই হারের প্রতিশোধ আজ ৪-১ গোলে নিয়েছে বার্সা। সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচ পর বায়ার্নের বিপক্ষে জয় বার্সার। সময়ের হিসেবে ৯ বছর পর।
জয়ের পূর্বাভাস যেন আজ শুরুতেই দিয়ে রেখেছিল বার্সা। এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানি স্টেডিয়ামে খেলা দেখা আসা অনেক দর্শক হয়তো তখনো নিজেদের আসনে ঠিকমতো বসেননি। কিন্তু ততক্ষণে উল্লাসে মেতে উঠেছেন বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরা। জি, ম্যাচের এমনই এক সময় গোল উদযাপনে মাততে দাঁড়িয়ে পড়েন বসা দর্শকেরাও। ম্যাচের ৫৮ সেকেন্ডেই যে বার্সাকে লিড এনে দেন রাফিনিয়া। ফেরমিন লোপেজের পাস ধরে বায়ার্ন মিউনিখের গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নায়ারকে কাটিয়ে বলকে জালে জড়িয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার।
শুরুতেই গোল হজম করা বায়ার্নও পিছিয়ে ছিল না। কিন্তু ৯ মিনিটে হ্যারি কেইন যে গোলটি করলেন তা অফসাইডে বাতিল হয়। টমাস মুলারের পাস ধরে সমতাসূচক গোল করে সতীর্থদের সঙ্গে যে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন কেইন তা মুহূর্তেই ভিএআরে মিইয়ে যায়। তবে আনন্দে ভাসতে খুব বেশি সময় নেননি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক। সতীর্থদের সঙ্গে বার্সেলোনার রক্ষণে চাপ বাড়িয়ে একের পর এক আক্রমণ করে বায়ার্নকে সমতাসূচক গোল এনে দেন তিনি।
ম্যাচের ১৮ মিনিটে সার্জ গ্যানাব্রির দুর্দান্ত ক্রসে ভলি করে গোল করেন কেইন। সমতায় ফিরে বায়ার্ন বল পজিশনে বেশ এগিয়ে থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিলেও গোল পায় বার্সা। ৩৬ মিনিটে লামিনে ইয়ামাল ক্রস ফেরমিন লোপেজ রিসিভ করার সময় বায়ার্ন গোলরক্ষক নায়ার সামনে আসলে বাঁ প্রান্তে বল বাড়িয়ে দেন এই উইঙ্গার। বলের লাইনে থাকা রবার্ট লেভানডফস্কি ফাঁকা জালে বল জড়াতে ভুলেননি। এতে নিজেদের অস্ত্রেই বায়ার্ন ঘায়েল। দীর্ঘ ৮ মৌসুম তো বায়ার্নের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন পোলিশ স্ট্রাইকার।
ঘরের অস্ত্রে ঘায়েল হওয়া বায়ার্নের ক্ষতে কয়েক মিনিট পর আরও বড় আঘাত করেন রাফিনিয়া। ৪৫ মিনিটে মার্ক কাসাদোর ক্রসফিল্ড পাস ধরে বাঁকানো এক শটে নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় গোল করেন বার্সা অধিনায়ক। বাঁ দিকে লাফ দিয়ে বায়ার্নকে রক্ষা করতে পারেননি নায়ার।
বিরতির পর ব্যবধান কমানোর বিপরীতে চতুর্থ গোল হজম করে বায়ার্ন। ৫৬ মিনিটে ডান থেকে বাঁ প্রান্তে দুর্দান্ত এক ক্রস করেন লামিনে। সেই ক্রস দারুণভাবে বুক দিয়ে নামিয়ে গতিতে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলে অবিশ্বাস্য এক ফিনিশিং করেন রাফিনিয়া। তার বাঁ পায়ের জোরালো শট লাফ দিয়েও থামাতে পারেননি নায়ার। তাতে মৌসুমের দ্বিতীয় এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন ২৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। সেটাও আবার বার্সার হয়ে তার ১০০তম ম্যাচ খেলার রাতে। সময়টাও যেন এখন ব্রাজিলের। গতকাল রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছেন তাঁর জাতীয় দলের সতীর্থ ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। পরে বায়ার্ন অনেক চেষ্টা করেও আর ব্যবধান কমাতে পারেনি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্য ম্যাচে বড় জয় পেয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। আর্লিং হালান্ডের জোড়া গোলে স্পার্তা প্রাহাকে ৫-০ গোলে হারিয়েছে সিটিজেনরা। বাকি তিন গোল করেছেন ফিল ফোডেন, জন স্টোনস ও ম্যাথিয়াস নুনেস। সিটির স্বদেশি লিভারপুল ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছে আরবি লাইপজিগকে। জয়সূচক গোলটি করেছেন ডারউইন নুনেজ।