শুধু নামে নন, আদর্শ অলরাউন্ডার বলতে যাকে বোঝায় তেমনি যুব পর্যায়ে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যার প্রমাণ ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে ২৪২ রান ও ১২ উইকেট নিয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিরাজ। দলকে সেমিফাইনালে তুলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।
যুব বিশ্বকাপের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে জাতীয় দলে সুযোগ পান মিরাজ। কিন্তু দলে সুযোগ পেয়ে নিজের সত্তা যেন হারিয়ে ফেলেন তিনি। অলরাউন্ডার থেকে শুধু স্পিনার হয়ে যান ২৬ বছর বয়সী ক্রিকেটার। সত্তা হারানোর পেছনে অবশ্য জাতীয় দলের ব্যাটিং অর্ডারটাও একটা কারণ ছিল। যুব পর্যায়ে মিডল অর্ডারে নামার সুযোগ পেয়ে ব্যাটিংয়ের দক্ষতা দেখানো মিরাজকে যে জাতীয় দলে লোয়ার অর্ডারে নামতে হয়। আবার অনেক সময় দলের প্রয়োজনে তাঁকে ওপেনিং কিংবা তিনেও খেলতে হয়েছে।
ধারাবাহিকভাবে তাই ‘দাদাদের’ মঞ্চে অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা হয়নি মিরাজের। তবে সবশেষ কয়েক বছরে নিজেকে বদলে ফেলেছেন তিনি। যার প্রমাণ ঘরের মাঠে ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে প্রতিপক্ষকে পরাজয়ের স্বাদ দেওয়া। ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারানোর ম্যাচে সিরিজ সেরাও হন তিনি। সবশেষ হাইব্রিড মডেলের এশিয়া কাপে আফগান্সিতানের বিপক্ষে তুলে নেয় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১১২ রানের ইনিংসে ম্যাচসেরাও হন তিনি।
শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নয়, ধারাবাহিক অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ধরে রেখেছেন টেস্টেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের পেছনের অবদানই তার নামের পক্ষে কথা বলে। দুই টেস্টে একটি করে ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে ৭৭ ও ৭৮ রানের ইনিংস খেলেছেন। সঙ্গে তার শক্তির জায়গা বোলিং তো ছিলই। পুরো সিরিজে ১৫৫ রানের সঙ্গে নিয়েছেন ১০ উইকেট। তার এই অনবদ্য পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে সিরিজসেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।
ব্যাটে-বলের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সই বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে পুরোনো মিরাজকে পাওয়ার। স্বপ্ন দেখাচ্ছে সাকিব আল হাসানের যোগ্য উত্তরসূরী হওয়ারও। ভারত সফরে গিয়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তো শিষ্যকে একপ্রকার ছাড়পত্রই দিয়ে দিলেন। গুরুর চোখে মিরাজ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সাকিব। গতকাল চেন্নাইয়ের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোচ বলেছেন,‘গত ৫-৬ বছরে বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নতি করা ক্রিকেটার সে। সত্যিকার অর্থেই সে সাকিবের ভূমিকা নেওয়ার জন্য তৈরি। সে তার ব্যাটিংয়ে উন্নতি ঘটিয়েছে। আর শক্তির জায়গা বোলিংয়ে তো করেছে। সঙ্গে সে একজন অসাধারণ ফিল্ডারও।’
সাকিবের মতো হতে চান মিরাজও। অনেকবারই তাঁর মনের কথা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন তিনি। তাই বর্তমান ছন্দটা যদি ধরে রাখতে পারেন তাহলে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ হবে। কারণ ৩৭ বছর বয়সী সাকিব এখন ক্যারিয়ারের গোধূলি লগ্নে। তিন সংস্করণে একই সময়ে প্রথম অলরাউন্ডার হিসেবে বিশ্বসেরা হওয়া সাকিবের সুরটা টানার যোগ্য উত্তরসূরী তো মিরাজই।