বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি এনে দিতে চেয়োছিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব -২০ দলের ফুটবলাররা। সঙ্গে লক্ষ্য ছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের যুব পর্যায়ের টুর্নামেন্টের অধরা শিরোপা জয়ের। এখন পর্যন্ত হওয়া অন্য পর্যায়ের ট্রফি জেতা হলেও বাতি ছিল অনূর্ধ্ব -২০ দলের। সবশেষবার জয়ের খুব কাছে গিয়েও ভারতের কাছে হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে বাংলাদেশের।
এবার স্বপ্ন পূরনের সঙ্গে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যেও সফল হয়েছেন যুবারা। কাঠমুন্ডুর ফাইনালে নেপালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে। স্বগতিক দল হওয়ায় ঘরের মাঠের সমর্থকদের সমর্থন পেয়ে শুরুটা দারুণ করেছিল নেপালের যুবারা। সঙ্গে বেশকিছু গোলের সুযোগও তৈরি করেছিল তারা। তবে গোলের খেলায় জালের মুখ খুলতে ব্যর্থ হয় তারা। আসলে রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের বাধা টপকালেও পারছিলেন না বাংলাদেশের গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফকে। সেমিফাইনালের টাইব্রেকারে ভারতের দুটি পেনাল্টি শট ঠেকানো আসিফ আজ ৯ মিনিটে জালের দেখা পেতে দেননি নিরঞ্জন ধামীকে।
নেপালের ফরোয়ার্ড পরে আরো বেশ কিছু শট নিলেও বাধা হয়ে দাঁড়ান আসিফ। নেপাল গোল করতে ব্যর্থ হলেও বিরতিতে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বাংলাদেশকে উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দেন মিরাজুল ইসলাম। দুর্দান্ত এক ফ্রি কিকে ১-০ ব্যবধান এনে দেন বাংলাদেশকে। বিরতির পর নেপালকে সমতায় ফেরার সুযোগ না দিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। ৫৫ মিনিটের গোলের নায়কও মিরাজুল।
পরে ৭০ মিনিটে বাংলাদেশকে তৃতীয় গোল এনে দেন রাব্বি হোসেন রাহুল। জোড়া গোলদাতা মিরাজুলের ক্যাট ব্যাকে শুধু মাথাটা ছোঁয়ান রাব্বি। ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠা নেপাল ব্যবধান কমাতে পারে ৮০ মিনিটে। গোলটি করেন সামির তামাং। তবে স্বস্তিটা খুব বেশিক্ষণ টেকেনি নেপালের। ম্যাচের যোগ করা সময়ে যে আরেকটি গোল হজম করে বসে তারা। ৯৫ মিনিটে নেপালের জালে শেষ পেরেক মারেন পিয়াস আহমেদ নোভা।
এতে ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয়ে সাফ যুব পর্যায়ের ট্রফিতে চুমু এঁকে দেওয়ার সুযোগ পান মিরাজুল-রাব্বিরা। ৪ গোলে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেয়েছেন মিরাজুল। জয়ের পর ট্রফি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার ঘোষণা দিয়েছেন মিরাজুল। সঙ্গে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কথা জানিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড।
ট্রফি উৎসর্গ করার বিষয়ে মিরাজুল বলেছেন,‘সত্যি কথা বলতে আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল ফাইনালে যাওয়া। দেশের অবস্থা এখন ভালো না। বন্যায় অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তাদেরকে একটু খুশি করতে এই শিরোপা জিততে চেয়েছিলাম। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে। আমরা নিজেদের জন্য খেলেনি, দেশের মানুষের জন্য খেলেছি। দেশের ফুটবল যেন এগিয়ে যায় সেজন্য এই ট্রফি জিততে চেয়েছিলাম।’
শিষ্যর মতো শহীদদের ট্রফি উৎসর্গ করেছন কোচ মারিফুল ইসলামও। বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যের নায়ক বলেছেন,‘ এই জয় আমি উৎসর্গ করতে চাই যারা গত মাসে এবং এই মাসে যাদের প্রাণ হারিয়েছে। এ মাসে বন্যায় অনেকেই মারা গেছে। আশা করি, এই শিরোপা বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাবে।’