খেলার কলামের শুরুটা এর থেকে আর কত ভালো হতে পারতো? দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈর-শাসনের পতন উদযাপনের রেশ কাটতে না কাটতেই ভয়ানক বন্যায় কাতর দেশ। সাকিব-মাশরাফি-পাপন ইস্যুতে টালমাটাল দেশের ক্রিকেট। ঠিকমত প্রাকটিস করতে না পারা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টেস্ট ম্যাচ খেলতে মাত্রই মাঠে নেমেছিলো পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে। ক্রিকেটের দীর্ঘতম এই ফরম্যাটে আগের ১৩ বারের দেখায় শুধুমাত্র ২০১৫ সালের খুলনা টেস্টে একমাত্র ড্র ছাড়া বাকি ১২ ম্যাচেই হেরেছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী রেখে আজকের রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের ঐতিহাসিক জয়ে গত কয়েক বছরের ঘুণে ধরা ক্রিকেটে যেন এক নতুন প্রাণের সঞ্চার।
প্রথম দিনের শুরুতেই বৃষ্টিবাগরায় টস হতে বেশ দেরিই হয়। বৃষ্টি থামলে টসে জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিং এ পাঠায় টাইগার ক্যাপ্টেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে ৪৪৮ রানের নিরাপদ ইনিংসের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশকে ভালোই চোখ রাঙানি দিচ্ছিলো স্বাগতিক দল। সেখান থেকে ব্যাট করতে নেমে সাদমান ইসলামের দূর্দান্ত শুরুর পর মুশফিকুর রহিমের ১৯১ রানের বিধ্বংসী ইনিংসের উপর ভর করে ৫৬৫ রানের পাহাড় গড়ে তোলে বাংলাদেশ। জবাবে সাকিব-মিরাজ ঘূর্ণিতে মাত্র ১৪৬ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ২য় ইনিংস।
রানতাড়ায় স্বাগতিকদের ২৯ রানের সীমিত পুজি কোন উইকেট না হারিয়েই টপকে যায় বাংলাদেশ এবং প্রথমবারের মত পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিনিয়ে নেয় টেস্টের প্রথম বিজয়। ছিয়াশিতে পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হওয়ার পর প্রায় ৪০ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে তিন সংস্করণ মিলিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে তাদের বিপক্ষে প্রথমবারের মত কোনো জয় পেলো বাংলাদেশ। শান্তবাহিনীর ঐতিহাসিক এই জয়ে বৈষম্যবিরোধী পাকিস্তানি আন্দোলনকারীদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে যেন আরেকবার উচ্চারিত হলো, “তুমি কে আমি কে, বাংলাদেশ-বাংলাদেশ”।
এই জয়ে রেকর্ডবুকের পাতায় হয়তো অনেক ওলটপালট হবে, তবে সবথেকে সেরা হয়ে থাকবে টেস্টে পাকিস্তানের মাটিতে তাদেরকেই প্রথমবারের মত ১০ উইকেটে হারের স্বাদ উপহার দেয়া। এছাড়া প্রথমবারের মত টেস্টে ১০ উইকেটের জয় নিশ্চয়ই বিশ্ব ক্রিকেটে বাঘেদের একটি হুংকার, “শোনো মহাজন, আমি নয় তো একজন, আমরা অনেক জন”।
- ছবিঃ www.espncricinfo.com